মাছের রোগ প্রতিকার ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
রোগ হচ্ছে যে কোন প্রাণীর দেহের অস্বাভাবিক অবস্থা যা বিশেষ কিছু লক্ষণ দ্বারা প্রকাশ পায়। অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মাছ ও চিংড়ির মাঝেও নানা ধরনের রোগ বালাই হতে দেখা যায়। রোগ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে প্রতি বছরই অনেক চাষির পুকুরে ব্যাপক আকারে মাছ ও চিংড়ি মারা যায়। চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং দেশ লক্ষ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হয়।
রোগের কারণ জলজ পরিবেশের চাপ, রোগ-জীবাণু এবং মাছ ও চিংড়ির অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সে জন্য মাছ ও চিংড়ি রোগাক্রান্ত হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ বা বিষয় কাজ করে। এখন পর্যন্ত যে সব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণের অবনতি (পানির তাপমাত্রা, পচা জৈব পদার্থ, পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন,
অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি) প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার ও খাদ্য প্রয়োগ,বাইরে থেকে ময়লা ধোয়া দূষিত পানির প্রবেশ,অধিক মজুদ ঘনত্ব, প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব, ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন ও হ্যান্ডেলিং
,পরজীবী ও রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণ
আঘাত প্রাপ্ত পোনা ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন অতিরিক্ত মজুদ ঘনত্ব অপ্রস্তুত পুকুর।
সাধারণভাবে রোগাক্রান্ত মাছ ও চিংড়ির মধ্যে যে সমস্ত লক্ষণ ও আচরণ বেশি দেখা যায়
> ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং ছন্দহীনভাবে পানির উপর সাঁতার কাটে
> শরীরের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে
> খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয় বা একেবারে বন্ধ করে দেয়
> পানির উপর ভেসে খাবি খায়
> ফুলকার স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে যায়।
> দেহের উপর লাল/কালো/ সাদা দাগ পড়ে
> দেহে বিজল থাকে না, দেহ খসখসে হয়ে যায়
> মাছ পানির তলদেশের কোন কিছুর সাথে গা ঘষতে থাকে চোখ ফুলে যায় বা বাইরের দিকে বের হয়ে আসে।
চিংড়ি রোগাক্রান্ত
o ঠিকমত খাদ্য গ্রহণ করে না
o ধীর গতিতে চলাচল করে।
o এলোমেলো ভাবে পানির উপর সাঁতার কাটতে থাকে
o পাড়ের কাছাকাছি ভেসে থাকে, কখনও পাড়ে উঠে আসে
o খোলস নরম হয়ে যায়।
o ফুলকা কালো দাগ দেখা যা।
o খোলসের উপর নীলাভ রং বা শেওলা জমে যায়
o ইাঁটার অংশ এবং এন্টিনা খসে পড়ে অথবা বাঁকা হয়ে যায়।।
মাছ ও চিংড়ির সাধারণ রোগ
মাছ ও চিংড়ির রোগ চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল ব্যাপার। কারণ রোগ সনাক্তকরণ ও প্রতিটি মাছ বা চিংড়ির আলাদা
আলাদাভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তারপরও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে এগুলোর চিকিৎসা বা রোগের প্রতিকার জরুরী হয়ে পড়ে।
নিচে মাছ ও চিংড়ির কিছু সাধারণ রোগ ও এগুলোর প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
মাছের সাধারণ রোগ
ক্ষত রোগ
অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের অধিকাংশ মাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত শীত মৌসুমে এ রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। এখন পর্যন্ত এ রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে দূষিত পরিবেশে ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে বলে ধারণা
করা হয়।
•মাছের গায়ে লাল দাগ ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
• ক্ষতস্থানে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়।
প্রতিরোধ
শীতের শুরুতে ১ কেজি/প্রতি শতকে পুকুরে চুন প্রয়োগ এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখলে এ রোগ হয় না।
প্রতিকার
২-৪ পিপিএম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ মিনিট গোসল ১২৫ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে মাছকে গোসল করানো (যতক্ষণ সহ্য করতে পারে)।
লেজ ও পাখনা পচা রোগ
এ রোগ সাধারণতঃ অ্যারোমোনাস ও মিক্সো-ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। কার্পজাতীয় মাছে আক্রমণ বেশি হলেও মাঝে মাঝে পাংগাস মাছেও এ রোগ দেখা যায়। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে মাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
* মাছের দেহ ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করে
* ত্বকের পিচ্ছিলতা কমে যায়
* প্রাথমিক পর্যায়ে লেজ ও পাখনায় লাল দাগ দেখা যায়
* পাখনার পর্দা ছিড়ে যায় এবং আস্তে আস্তে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
প্রতিরোধ
* পুকুরে ১ হারে চুন প্রয়োগ।
প্রতিকার
* ২.৫% লবণ পানিতে ২-৩ মিনিট গোসল
২-৪ পিপিএম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ১ মিনিট গোসল।
ড্রপসি (পেটফুলা রোগ)
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে। সরপুটি, গ্রাসকার্প, সিলভারকার্প ও শিং-মাগুরজাতীয় মাছে এ রোগ বেশি সংক্রমিত হতে দেখা যায়। সাধারণত শীতের প্রাক্কালে ও শীতকালে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।
● রোগাক্রান্ত মাছের পেট ও আঁইশের নিচে পানি জমে
● মাছের পেট ফুলে বেলুনের মত আকার ধারণ করে
● চামড়ায় ঘা হয় ও অস্ত্র ফুলে যায়।
● আইশ আলগা হয়ে যায়।
প্রতিরোধ
● সুষম খাদ্য প্রয়োগ
● জৈব সার কম দেয়া
● প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ
● প্রতি কেজি খাবারে ২৫০ মিগ্রাম রেনাভেট মিশিয়ে ৪-৭ দিন খাওয়ানো
আরগুশোসিস (মাছের উকুন)
সব ধরনের মাছে এ রোগ হতে পারে। সাধারণত মাছের পাখনা ও আইনের ফাঁকে আরগুলাস নামক এক প্রকার পরজীবী দ্বারা মাছ আক্রান্ত হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে আরগুলাসের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।
● মাছ অবিরাম ছুটাছুটি করতে থাকে।
● মাছের গায়ে এ পরজীবী লেগে থাকতে দেখা যায় খালি চোখেই
● মাছ শক্ত জিনিসের সঙ্গে গা ঘষতে থাকে
● দেহের বিভিন্ন স্থানে লাল ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
প্রতিকার
● ১০ লি. পানিতে ২০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে ঐ দ্রবণে মাছকে গোসল করানো
● পুকুরে ৬-১২ গ্রাম/শতাংশ/ফুট হারে ডিপটেরেক্স পরপর ৩ সপ্তাহ প্রয়োগ অথবা সুমিথিয়ন ২-৩ মিলি/ শতাংশ/ফুট হারে পরপর ৩ সপ্তাহ পুকুরে প্রয়োগ।
প্রতিরোধ
● প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ
● আক্রান্ত পুকুরে ব্যবহৃত ভেজা জাল অন্য পুকুরে ব্যবহার না করা
ছত্রাক রোগ (সেপ্রোলেগনিয়াসিস)
এ রোগ সাধারণত রুইজাতীয় মাছের সকল প্রজাতি ও অন্যান্য চাষযোগ্য মাছে সংঘটিত হতে দেখা যায়। মাছের ডিম এবং রেণুর এটি একটি প্রধান রোগ। রোগ সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে মাছের মড়ক দেখা দেয়। রোগটি সংক্রামক।
● মাছের দেহে বা ডিমে মিহি সুতার ন্যায় উজ্জ্বল বস্তু দেখা যায়।
মাছের দেহে অতিরিক্ত পিচ্ছিল পদার্থের উপস্থিতি দেখা যায়
● সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে মাছের ক্ষুধা হ্রাস পায়, মাছ ধীরে ধীরে ও অলসভাবে চলাফেরা করে, মাছের আক্রান্ত
অংশে পচন ধরে, মাছে ব্যাপক হারে মড়ক দেখা দেয়।
প্রতিরোধ
● হ্যাচারির সকল যন্ত্রপাতি ও ট্যাংক সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করার পর শতকরা ১০ ভাগ ফরমালিন পানি দিয়ে ধৌত করা
● অনিষিক্ত ও মৃত ডিমগুলোকে অবিলম্বে হ্যাচারি ট্যাংক থেকে সরিয়ে নেয়া এবং অধিক খাদ্য প্রয়োগ না করা।
প্রতিকার
● হ্যাচারিতে লালনকৃত ডিমগুলোকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দিয়ে ধৌত করা
● ০.১০-০.১৫ পিপিএম মিথিলিন দ্বারা আক্রান্ত পোনা বা ডিমগুলোকে ধৌত করালে বা দ্রবণে ১-২ ঘন্টা গোসল
করালে প্রতিকার পাওয়া যায়
● ০.১৫-০.২০ পিপিএম হারে ম্যালাকাইট গ্রীন পুকুরে প্রতি সপ্তাহে একবার দু' থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত প্রয়োগ করলে
ভাল ফল পাওয়া যায়
● ২.০-২.৫ শতাংশ লবণে আক্রান্ত মাছকে যতক্ষণ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত মাছকে গোসল করানো।
সাদা দাগ রোগ (ইকথায়োপথিরিয়াসিস)
চাষোপযোগী মাছের জন্যে এটি খুবই অনিষ্টকারী রোগ। দেশী কার্পজাতীয় মাছ ও পোনার ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকোপ বেশী
হতে দেখা যায়। এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।
■ ইকথোয়োপথিরিয়াস মাল্টিফিলিস নামের এককোষী পরজীবী এ রোগ ঘটায়।
■ মাছের ত্বক, পাখনা এবং কানকোয় বিন্দুর মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা ফোঁটা দেখা দেয়।
■ মাছের গায়ে পিচ্ছিল আবরণ কমে যায় ও স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য হারায়
■ আক্রান্ত মাছের পাখনা মুড়িয়ে যায়।
■ মাছ অলসভাবে চলাফেরা করে এবং খাদ্য গ্রহণে অনিহা দেখায়
■ পানির উপরিভাগে দীর্ঘ সময় ধরে ভেসে থাকে
■ পোনা মাছের আঁইস, পাখনা সহ সারাদেহে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ দেখা যায়।
প্রতিরোধ
■ শামুক জাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলা
■ রোদে শুকানো জাল পুকুরে ব্যবহার করা
■ প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাছ মজুদ রেখে অতিরিক্ত মাছ সরিয়ে ফেলা।
■ শতকরা ২.৫০ ভাগ লবণ পানিতে ৫ মিনিট গোসল করিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করা
■ চুন প্রয়োগের মাধ্যমে নার্সারি পুকুর প্রস্তুত করলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়।
প্রতিকার
■ আক্রান্ত মাছকে আলাদা পাত্রে ৫০ পিপিএম ফরমালিন অথবা ১ পিপিএম তুঁতে অথবা শতকরা ২.৫০ ভাগ লবণ পানিতে কয়েক মিনিটের জন্য রাখা অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত মাছ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ গোসল করানো
পোনা মাছের সংখ্যা কমিয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা
ট্রাইকোডাইনিয়াসিস রোগ
এটি একটি এককোষী পরজীবী ঘটিত রোগ। এ রোগ প্রধানতঃ রুইজাতীয় মাছের ফুলকাকে আক্রান্ত করে। ধানী পোনা ও আঙ্গুলে পোনার ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। প্রাপ্ত বয়স্ক মাছ এ রোগের বাহক। এটি একটি সংক্রামক রোগ।
■ পোনা মাছের শরীরে অধিক বিজল দেখা দেয়
■ আক্রান্ত মাছের ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়
■ পোনামাছ খাদ্যগ্রহণে অনীহা দেখায়।
■ মাছের ফুলকা এবং দেহের বিভিন্ন অংশে গোলাকার হলদে দাগ দেখা যায়
■ মাছ দ্রুত ও অবিশ্রান্তভাবে চলাফেরা করতে থাকে
■ আক্রান্ত পোনামাছ দ্রুত মারা যায়।
প্রতিরোধ
■ মাছের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া
■ অতিরিক্ত মিশ্র (কম্পোস্ট) ও জৈব সার না দেয়া।
■ প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা
প্রতিকার
■ আক্রান্ত মাছকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিনে ৩-৫ মিনিটের জন্যে গোসল করানো।
মিক্সোবোলিয়াসিস রোগ
■ মিক্সোবোলিয়াসিস রোগঃ মিক্সােবোলাস প্রজাতির এককোষী প্রাণির আক্রমণে রুইজাতীয় মাছে এ রোগ হতে দেখা যায়।
■ রুইজাতীয় মাছের, বিশেষ করে কাতলা মাছের ফুলকার উপরে সাদা কিংবা হালকা বাদামী গোলাকার গুটি বংশবৃদ্ধি
করতে থাকে
■ ক্রমান্বয়ে গুটির প্রভাবে ফুলকায় ঘা দেখা দেয় এবং ফুলকা খসে পড়ে
■ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত সৃষ্টিতে মাছ অস্থিরভাবে ঘোরাফেরা করে
■ আক্রান্ত মাছকে খাবি খেতে দেখা যায় এবং
শেষ রাতের দিকে ব্যাপক মড়ক দেখা দেয়।
প্রতিরোধ
■ পুকুর প্রস্তুতকালীন প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা হলে সাধারণতঃ এ রোগের প্রকোপ থাকে না।
প্রতিকার
■ অদ্যাবধি এ রোগের সরাসরি কোন চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি, তবে পুকুরের প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন
প্রয়োগ করলে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি পেয়ে অম্লত্ব দূর হয়।
■ আক্রান্ত মাছকে শতকরা ৩.০ ভাগ লবণ পানিতে ১ মিনিট (একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে যতক্ষণ শ্বাস বন্ধ রাখতে পারে ততক্ষণ সময় পর্যন্ত) গোসল করাতে হবে।
ডেক্টাইলোগাইরোসিস রোগ
ডেক্টাইলোগাইরাস গণের কয়েকটি প্রজাতির আক্রমণে এ রোগ হয়। এ রোগ ফুলকা কৃমি নামেও পরিচিত। এতে প্রধানতঃ
মাছের ফুলকা আক্রান্ত হয়। কার্পজাতীয় পোনামাছে এ রোগ হতে দেখা যায়।
■ মাছের দেহে অধিক বিজলের সৃষ্টি হয়।
■ ফুলকা ফুলে যায় ও রক্তক্ষরণ হয়
■ ফুলকা ও দেহের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
■ মাছের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার খুবই দ্রুত হয়
■ কানকো খোলা থাকে
■ মাছের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়
■ মাছ অস্থিরভাবে লাফালাফি করে, ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে মারা যায়
প্রতিরোধ
■ পরজীবীগুলো সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা সম্ভব না হলে অনুকূল ব্যবস্থাপনায় পরজীবীর সংখ্যা কমিয়ে
সাময়িক উপশম পাওয়া যেতে পারে।
প্রতিকার
■ আক্রান্ত মাছকে ২৫০ পিপিএম ফরমালিন দ্রবণে গোসল করাতে হবে।
■ এছাড়া ডিপটেরেক্স ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অল্প মাত্রায় মিশ্রিত করে(০.৩ পিপিএম ডিপটেরেক্স ও ৩.০
পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) পুকুরে সপ্তাহে একবার করে দু' সপ্তাহ যাবত প্রয়োগ করলে ব্যাপক আক্রমণ দমন করা সম্ভব হবে।
পুষ্টির অভাবজনিত রোগ
পরিমিত খনিজ লবণ ও ভিটামিনের অভাবে মাছের দেহে বিভিন্ন প্রকার রোগ বালাই হতে দেখা যায়।
■ দেহ বেঁকে যায়।
■ লেজের অংশ বেঁকে যায়
প্রতিকার
দেহ বা লেজ বেঁকে গেলে কোন প্রতিকারের উপায় নাই।
প্রতিরোধ
■ সুষম খাদ্য প্রয়োগ
■ খনির লবণ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ।
চিংড়ির রোগ
■ এন্টেনা ও সন্তরণ পদ খসে পড়া
কারণ
■ ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ
লক্ষণ
■ মজুদের ৩-৪ মাস পর এন্টেনা, সন্তরণপদ খতি অথবা ঝরে পড়তে থাকে।
প্রতিকার
সাময়িকভাবে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ করা
■ পানি পরিবর্তন করা
■ পিএইচ পরীক্ষা করে ২৫০-৩০০ গ্রাম/শতাংশ হারে ডলোমাইট প্রয়োগ করা।
খোলস শক্ত হয়ে যাওয়া
কারণ: পরিবেশগত পিএইচ, লবণাক্ততা বা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে খোলস পাল্টায় না, শত্রু হয়ে যায়।
লক্ষণ
■ খোলস স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে শক্ত হওয়া
■ বয়সের তুলনায় চিংড়ির কম দৈহিক বৃদ্ধি হওয়া।
প্রতিকার
■ পানির পরিবেশ উন্নয়ন
■ পরিবেশের যে কোন হঠাৎ পরিবর্তন, যেমন- পানির উচ্চতা বৃদ্ধি অথবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ
ক্যারাপেস ও শরীরের উপর পাথর জমা
কারণ: পরিবেশগত যে কোন গুণাগুণ/বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে
লবণাঞ্চতা বৃদ্ধির ফলে এটি বেশি হতে দেখা যায়।
লক্ষণ: করাত ও ক্যারাপেস অংশে ধূসর রংয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর দেখা যায়।
প্রতিকার
■ পুকুরের পানি পরিবর্তন
■ স্বাদু পানির সরবরাহ বৃদ্ধি
■ পানির উচ্চতা বৃদ্ধি।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর অধিক এবং লাভজনক উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ভাল ব্যবস্থাপনার পরও চাষকালীন সময়ে মাছ ও চিংড়ি চাষের পুকুরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে ফলে উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস ঘটার আশংকা থাকে। নিচে মাছ ও চিংড়ি চাষের পুকুরে এরূপ কিছু ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
১. রাক্ষুসে ও অ্যচাষযোগ্য মাছের প্রবেশ
পুকুর শুকানো অথবা রোটেনন প্রয়োগ করার পরও অনেক সময় পুকুরে রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ থেকে যেতে পারে। এ ছাড়াও বর্ষাকালে পানির সাথে বা অন্য কোন ভাবে যে কোন সময় বাইরে থেকে শোল, টাকি, কৈ, শিং, মাগুর, চান্দা, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছ পুকুরে প্রবেশ করতে পারে। এতে ব্যাপকভাবে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন কমে যেতে পারে।
প্রতিকার
পাখি, জাল, বৃষ্টির পানি বাইরে থেকে আসা স্রোত বা মানুষের মাধ্যমে রাক্ষুসে ও অচাষযোগ্য মাহ প্রবেশ করে। তাই এ সমস্ত উৎস থেকে সতর্ক থাকতে হবে। নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উল্লেখিত সমস্যার প্রতিকার করা যেতে পারে-
■ পুকুরে বাইরের পানি ঢুকতে না দেয়া
■ জাল ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন
■ বাচ্চাদের নজরে রাখা
■ প্রয়োজনে পুকুরের চারদিকে ৩০-৪০ সেমি উঁচু বানা বা মশারি জালের বেড়া দেয়া।
২. পানির উপর ঘন সবুজ স্তর
অতিরিক্ত শেওলার জন্য পানির রং ঘন সবুজ হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় পানিতে অক্সিজেন কমে যায় এবং দিনের বেলায় পিএইচ মান বেড়ে যায়। এ ছাড়া শেওলা মরার পর পুকুরের তলায় জমা হয় এবং পড়ে গিয়ে পানি দূষণ ও বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মাছ ও চিংড়ি পানির উপরি তলে খাবি খায় এবং কখনও কখনও ব্যাপকহারে মারা যায়।
প্রতিকার
তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে পুকুরে অগভীর নলকূপের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হয়। সেই সাথে
পুকুরে খাদ্য ও সার প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু সিলভার কার্পের চারা পোনা ছেড়ে জৈবিকভাবে
অতিরিক্ত উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৩. পানির উপর লাল সর
অতিরিক্ত লৌহ অথবা লাল শেওলার জন্যে পানির উপর লাল স্তর পড়তে পারে। ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না। এ জন্যে পুকুরে খাদ্য ও অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়।
প্রতিকার
ধানের খড় বা কলাপাতা পেচিয়ে দড়ি বানিয়ে পানির উপর টেনে তুলে ফেলা যায়।
ধানের খড় ছড়িয়ে দিতে হবে।
৪. এমোনিয়া জমা হওয়া
বিভিন্ন কারণে পুকুরের তলদেশে এমোনিয়া সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চতর পিএইচএ এমোনিয়া চিংড়ির জন্য অত্যন্ত মারাত্নক। পুকুরে ফাইটোপ-প্লাংকটন বেড়ে গেলে পানির পিএইচ দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে ব্যাপক সংখ্যায় মাছ ও চিংড়ি মারা যায়। চিংড়ির ফুলকায় কালো দাগ পড়লে বুঝতে হবে নাইট্রোজেন বর্জ্য ও অন্যান্য রাসায়নিকের মাত্রা বেশি। এমোনিয়া বেড়ে গেলে রক্ত পরিবহনতন্ত্র দ্রুত আক্রান্ত হয়।
প্রতিকার
মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখা সম্ভব হলে ৩০-৫০% পানি বদল ও পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ ।
প্রাথমিক অবস্থায় ৬০% শক্তির বি-চিং পাউডার ০.৫ পিপি এম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
৫. খাবি খাওয়া
অনেক পুকুরেই আগষ্ট-সেপ্টেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে এ সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। সাধারণত ভোর রাতের দিকে মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে উঠে খাবি খেতে থাকে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে এটা ঘটে। অক্সিজেন স্বল্পতা যদি খুব বেশি ও দীর্ঘ মেয়াদী হয়, তবে মাছ ও চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
প্রতিকার
প্রাথমিক অবস্থায় সাময়িকভাবে সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এর সাথে সাথে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে অথবা এলুমিনিয়ামের ডেকচি দিয়ে পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিপদজনক অবস্থায় পুকুরে পরিষ্কার নতুন পানি সরবরাহ বা স্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে একই পুকুরের পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দীর্ঘসময়ব্যাপী পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা চলতে থাকলে বড় মাছ ও চিংড়ি ধরে বিক্রি করা যেতে পারে।
৬. রাক্ষুসে প্রাণীর উপদ্রব
সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ও উদ খেয়ে ফেলে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।
প্রতিকার
সাপ, ব্যাঙ, ফাঁকড়া ও উদ দেখার সাথে সাথেই মেরে ফেলতে হবে। এ সমস্ত প্রাণি নিয়ন্ত্রণে কায়িক মাধ্যমই সবচেয়ে ভাল। উপ নিয়ন্ত্রেণে চুন ভর্তি ডিমের খোসা পুকুরের পাড়ে রেখে দিলে উদের উৎপাত কমে যায়। বাঁশের চাই ব্যবহার করে সহজেই কাঁকড়া মারা যায়। সাধারণভাবে ব্যাঙ যে সব জায়গায় ডিম দেয় (যেমন- পানি ও পাড়ের সংযোগ স্থল) সেসব স্থানের ঘাস দূর করে ফেলতে হবে। এছাড়াও যে সমস্ত পুকুরের আশেপাশে জঙ্গল থাকে সেখানেই এসব প্রাণির উপদ্রব বেশি হয়। এ জন্য পুকুরের চারপাশ আগাছা-জঙ্গল মুক্ত রাখতে হবে।
৭. অতিরিক্ত খাদ্য প্রয়োগ
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। প্রায় সব চাষিই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য
প্রয়োগ করে। ফলে এ সব খাদ্যের একটা বড় অংশ তলায় জমা হয়ে পানির পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। এতে মাছ ও চিংড়ি
সহজেই রোগাক্রাড় হয়ে মারা যায়।
প্রতিকার
প্রয়োগের পূর্বে খাদ্যের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। মাঝে মাঝে খাদ্য প্রযোগ স্থানের মাটিতে জমে থাকা পচা জৈব
পদার্থ অপসারণ করতে হবে।
৮. ঘোলাত্ব
বৃষ্টি ধোয়া পানিতে পুকুর ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সূর্যের আলো পানিতে প্রবেশ করতে পারে না এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি বাধাগ্রস্থ হয়। এ ছাড়াও মাছের ফুলকা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রতিকার
বৃষ্টি ধোয়া পানির প্রবেশ রোধ করার জন্য সমতল ভূমি থেকে পুকুরের পাড় উঁচু রাখতে হবে। ঘোলাত্ব নিয়ন্ত্রণের শতাংশে ১-২ কেজি করে পোড়া চুন বা জিপসাম প্রয়োগ করা যেতে পারে। খসখসে পাতাবিশিষ্ট (খোকসা, শেওড়া, বাঁশ)
গাছের ডাল, ধানের খড় এক সপ্তাহ ডুবিয়ে রাখলেও ঘোলাত্ব নিবারণ হতে পারে।
৯. তলার কালো কাদা
অতিরিক্ত খাদ্য ও জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় জমা হয়ে তলার মাটি কালো দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চাষ করা পুকুরে এ সমস্যা প্রকট। এর ফলে বিষাক্ত গ্যাস তলায় জম্য হয়ে রুই জাতীয় মাছ, থাই পাঙ্গাশ চিংড়ির মড়ক
দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়াও চিংড়ির দেহ কালো হয়ে বাজার মূল্য হ্রাস করে।
প্রতিকার
চিংড়ি ছাড়ার পূর্বে তলার অতিরিক্ত কালো কাদা তুলে ফেলতে হবে। চাষকালীন সময়ে চিংড়ির মাকড় দেখা দিলে দ্রুত পানি বদল, মজুদ ঘনত্ব হ্রাস এবং সার ও খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
১০. স্বজাতিভোজিতা
চিংড়ি চাষের এটি একটি বড় সমস্যা। স্বভাবগত কারণে চিংড়ি স্বজাতিভুক্ত প্রাণী। যখন এদের খাদ্যাভাব দেখা দেয় তখন এরা ছোট ও দুর্বল আকৃতির চিংড়িগুলোকে ধরে খায়।
প্রতিকার
মজুদকালীন সময়ে পুকুরে একই আকৃতির পিএল বা জুভেনাইল মজুদ করতে হবে। এ ছাড়াও নিয়মিত সার ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করে পুকুরে খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. বৃষ্টির পর ভেসে উঠা
বৃষ্টির পর অনেক সময় মাছ ও চিংড়ি পানির উপর ভেসে খাবি খেতে পারে। পানির পিএইচ কমে যাওয়ার ফলে ও ক্ষতিকর হাইড্রোজেন সালফাইডের বিষক্রিয়া বেড়ে যাওয়ায় এটা ঘটে থাকে।
প্রতিকার
বৃষ্টির পরপরই পানির পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। প্রতিবার ভারী বৃষ্টির পর প্রতি শতকে ৭৫-৮০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
১২. অমাবশ্যা/পূর্ণিমায় চিংড়ির পাড়ে চলে আসা
অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে রাতের বেলায় চিংড়ি পাড়ের উপর চলে আসতে পারে। ফলে শিয়াল বা অন্য কোন নিশাচর রাক্ষুসে প্রাণী দ্বারা চিংড়ি আক্রান্ত হতে পারে। প্রতিকার অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা। তবে পুকুরের পানির পরিবেশ ভাল থাকলে এ অবস্থা দেখা
যায় না।
১৩. খরা
অনাবৃষ্টিজনিত সমস্যায় পুকুরের পানি কমে, গরম হয়ে পুকুরের অক্সিজেন স্বল্পতা সহ মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়।
প্রতিকার
গভীর/অগভীর নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। পুকুরের পানির এক তৃতীয়াংশ কচুরিপানার তৈরী করে পানি ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা অন্যথায় ঝুঁকি এড়াতে বড় আকারের মাছ আহরণ ও বাজারজাত করাই শ্রেয়।
১৪. বন্যা
যৌক্তিক কারণেই সকল স্তরের জলাশয়ে মাছচাষ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই জলাশয়গুলোর উপযুক্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াই চাষ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে বর্ষাকালে বন্যা বা অতি বর্ষণজনিত কারণে অনেক জলাশয় প্লাবিত হওয়ায় মাছচাষিরা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।
প্রতিকার
■ পুকুর বা চাষের জলাশয় প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বন্যার অব্যবহিত পূর্বেই জলাশয়ের চারপাশে জাল/বানা
দিয়ে মাছ বের হয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা
■ পুকুর থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা
বন্যার পূর্বেই মাছ আহরণ করা
■ বন্যার পরপরই প্লাবিত পুকুর প্রস্তুত করে বড় আকারের পোনা মজুদ করা।
১৫. বিষ প্রয়োগ
পুকুরে শত্রুতামূলকভাবে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদের ক্ষতিসাধন বর্তমানে একটি প্রকট সামাজিক সমস্যা হিসেবে
দেখা দিয়েছে।
প্রতিকার
■ বিষ প্রয়োগের পরপরই পুকুরে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি প্রবেশ করানো এবং অতি দ্রুত জীবিত মাছ অন্য পুকুরে স্থানান্তর
■ বিষক্রিয়ায় মৃত মাছ পুড়িয়ে ফেলা বা মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখা
■ গোলযোগপূর্ণ জলাশয়ে মাছচাষে নিরুৎসাহিত করা
■ সামাজিকভাবে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
■ বাণিজ্যিক খামারে পাহারার ব্যবস্থা করা
■ বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বড়মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ।
১৬. মাছ চুরি
বিষ প্রয়োগের ন্যায় মাছ চুরিও অপর একটি সামাজিক সমস্যা- যা নিরসনে চাষিকে স্থানীয় অবস্থাভেদে ব্যবস্থা নিতে হবে।
■ পুকুর পাহারার ব্যবস্থা রাখা
■ পুকুরে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে রেখে জাল টানায় প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা
■ বিক্রয়যোগ্য বড়মাছ দ্রুত আহরণ ও বাজারজাত করা
■ সামাজিকভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করা।
১৭. পানি দূষণ
নিম্নোক্ত বিশেষ বিশেষ কারণে পুকুর/জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে মাছের উৎপাদন হ্রাস সহ মৃত্যুর মাধ্যমে ক্ষতি সাধিত হয়।
■ শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য
■ শহর/আবাসিক এলাকার পয়: নিঃসরণ
■ কৃষি জমির কীটনাশক/রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ
■ অতিরিক্ত জৈব সার ও খাদ্যোপাদান পুকুরের তলায় জমা হওয়া
■ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত পশুর রক্ত ও নাড়ি-ভুঁড়ির বর্জ্য পুকুরে প্রয়োগ
■ গৃহস্থ বাড়ির আঙিনা থেকে জৈব পদার্থ (গোবর/কম্পোস্ট/মলমূত্র)ইত্যাদি বৃষ্টির পানিতে চুয়ে পুকুরে পতিত
হওয়া।
প্রতিকার
■ দূষিত পানি দ্রুত পরিবর্তন ও বিশুদ্ধ পানি পুকুরে দেখা
■ শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য যেন পুকুরে পড়তে না পারে তার ব্যবস্থা নেয়া।
■ পুকুরের পাড় উঁচু করা
■ অবস্থাভেদে প্রয়োজনীয় মাত্রায় চুন এবং পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করা
■ অতি দ্রুততার সঙ্গে দূষণ উপাদান অপসারণ করা।
১৮. হাস-মুরগির মল/লিটার ব্যবহার
পুকুরে হাস-মুরগির/লিটার প্রয়োজনের ফলে রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই এই সমস্যার সমাধান হাস-মুরগির মল/লিটার/ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রতিকার
■ হাস-মুরগির মল/লিটার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।
মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।
স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।